সোনারগাঁওয়ে মসলিন-শিল্পকেন্দ্রিক প্রাচীন শহর পানাম নগর
সোনারগাঁওয়ে মসলিন-শিল্পকেন্দ্রিক প্রাচীন শহর পানাম নগর
কেন পানাম নগরী বিখ্যাত?
পানাম নগরীর পত্তন কখন?
প্রাচীনকালে সোনারগাঁও কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
কারা পানাম নগরীর অধিবাসী ছিল?
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে মসলিন শিল্প কেন এতো আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল?
পানাম নগরীর নির্মাণ শৈলীর বিশেষত্ব কী?
পানাম নগরীর কাশীনাথ মন্দির
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেন পানাম নগরীর মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করে?
পানাম নগরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মসলিন-শিল্প কেন্দ্রিক ব্যবসা
জমজমাট থাকলেও একসময়ে ইংল্যান্ডের বস্ত্রশিল্পের জন্য নীল রঙের চাহিদা বেড়ে যায়। ইংরেজরা দেখলো, ইংল্যান্ডের রং শিল্পকে সমৃদ্ধ করার জন্য তাদের কাঁচামালের প্রয়োজন। সেকালে নীল গাছ হতে নীল রং তৈরী করা হতো। আর ইংল্যান্ডে এই নীল গাছের যোগান বাড়াতে তারা বাংলাদেশের মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন তারা এই মসলিন শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য মসলিন-সুতা কাটার কারিগরদের হাত কেটে দেয় এবং যে গাছ হতে মসলিন সুতা পাওয়া
যেত, সে পুটি-কার্পাস তুলা উৎপাদনকারী চাষীদেরকে নীল চাষ করতে বাধ্য করলো। বর্তমানকার গাজীপুরের কাপাসিয়া
এলাকায় ঐ পুটি কার্পাস তুলার ব্যাপক চাষ হতো। ঐ কার্পাস হতেই ঐ এলাকার নাম কাপাসিয়া
হয়েছে।
পানাম নগরীর গুরুত্ব কেন ও কবে থেকে কমতে থাকে?
সোনারগাঁওয়ে মসলিন কাপড়ের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে ধনী ব্যাবসায়ীদের অনেকেই পানাম নগরী ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আরো কিছু ব্যাবসায়ী পানাম নগরী হতে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভাজনের সময়ে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার কারণে বাকি ব্যাবসায়ী বা তাদের উত্তরসূরিরা সোনারগাঁও ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কোন কোনো ঐতিহাসিকের মতে ১৯৪৭ সালে কে বা কারা সুদৃশ্য এই মনোরম নগরীতে রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে এই নগরীটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। নগরীর অধিবাসীদের
অনেকেই আগুনে পুড়ে মারা যায়। বাকি যারা বেঁচে ছিলেন, তারাও পরবর্তীকালে এই নগরী ছেড়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রত্যাবাসিত হয়। এভাবে এককালের সমৃদ্ধ তিলোত্তমা পানাম নগরী জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং মহা কালের পরিক্রমায় সংরক্ষণ ও মেরামতহীনতার কারণে অতীতের সুরম্য অট্টালিকাসমৃদ্ধ পানামনগরী আজ একটি ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে ।
ধ্বংশধারার আবর্তের মধ্যেও কেন পানাম আজও এতো আকর্ষণীয়?
অতীতের তিলোত্তমা পানাম নগরী একটি ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হলেও
আপনি যদি এই শহরটিতে একবার ঢুকে এবং খুব কাছ হতে এই নগরীর অট্টালিকাগুলো দেখেন, তা হলে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত অট্টালিকাগুলোর মাঝেই আপনি খুঁজে নিতে পারবেন ঐ ধনী বস্ত্র ব্যাবসায়ীদের শৌর্য-বীর্য ও প্রতাপের সোনালী যুগটিকে। ঐ অট্টালিকারগুলোর নির্মাণ শৈলী, অলংকরণ-সৌন্ধর্য ও নাগরিক সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামোগুলো আপনাকে আশ্চর্য না করে পারবেন না। নগরীর প্রসশস্ত রাস্তাটি দিয়ে হাটতে হাটতে আপনারও মনে হবে, আপনিও বুঝি ছুটে চলছেন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে কোনো এক সমৃদ্ধ নগরীতে। যেখানে রাস্তার দুপাশে সাজানো রয়েছে মনোরম সব সুরম্য অট্টালিকা, বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনাকে অবিবাধন জানাচ্ছে ধনী বণিকদের পরিবারের সদস্যরা।
পানাম নগরী ধ্বংসের মূল কারণ কী শুধুই এটির বয়স বা স্থিতিকাল?
পানাম নগরীর অনেক ভবনকে সেকালে বস্ত্র ব্যাবসায়ীরা বস্ত্রের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতো। দুর্বৃত্ত কর্তৃক পানাম নগরীতে ঐ সকল বস্ত্রের গুদামে আগুন ধরিয়ে দিলে খুব সহজেই পুরো পানাম নগরী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় যা ক্রমান্বয়ে আরো ধ্বংস হতে হতে বর্তমানকার অবস্থায় এসে পৌঁছেছে । পৃথিবীর একশতটি ধ্বংসপ্রায় শহরের তালিকায় এই পানাম নগরী রয়েছে।
পানাম নগরীর উপর নির্মিত ভিডিওটি দেখতে নিচের ছবিটিতে ক্লিক করুন
No comments