Header Ads

মুসলিম ঐক্য: নামাজে তাশাহ্হুদ পড়ার নিয়ম নিয়ে হুজুরদের মধ্যে বিতর্ক


মুসলিম
ঐক্য: নামাজে তাশাহ্হুদ পড়ার নিয়ম নিয়ে হুজুরদের মধ্যে বিতর্ক

তাশাহুদ পড়ার নিয়ম নিয়ে করা বিতর্ক করেন?

আপনারা ইদানিং লক্ষ্য করেছেন যে মুসলিমদের ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের নিয়ম নিয়ে হুজুরদের মধ্যে প্রচুর মতানৈক্য রয়েছে। ধরণের মতানৈক্য থাকতেই পারে। কারণ, একটি আমল পালন করার ব্যাপারে নবীজি একাধিক উপায় বলে দিয়েছেন। এটাই ইসলামের সৌন্ধর্য। ইসলাম একঘেয়েমির ধর্ম নয়।  বৈচিত্রিক উপায়ে আল্লাহ্পাকের সান্নিদ্ধ লাভের নানান উপায় নবীজি আমাদের বাতলে দিয়েছেন।

হুজুরদের মধ্যে মতানৈক্যতার আরো একটি কারণ হলো, হয়তো বিশেষ ওই আমলটির ব্যাপারে যে হাদীসটি রয়েছে, তা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। আর এই ব্যাখ্যাগুলো একেক হুজুরদের কাছ থেকে একেক  ভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপিত হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একজনের ব্যাখ্যা অন্যজনের ব্যাখ্যাটির সাথে মিলে না। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সকল হুজুরদের ব্যাখ্যাই সঠিক হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো ব্যাখ্যা প্রাপ্ত হাদীসটির ভিন্ন একটি রূপদান করে থাকে। তবে বর্তমানে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার যে এক হুজুর আরেক হুজুরের ব্যাখ্যাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে থাকেন - যেটি আলেম সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাসাদের সৃষ্টি করে।  

এরকম পরিস্থিতিতে হুজুদের মধ্যে অনেকটা ঝগড়া ঝাটির পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা মুসলিম ঐক্যের পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।  আর আমাদের আপত্তি এই জায়গাটায়।  এতে আমাদের সাধারণ মুসমানদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

তাশাহুদ সম্মন্ধে এই প্রবন্ধে আপনি যা যা জানবেন 

আজকে আমরা নামাজের তাশাহুদ পড়ার নিয়ম নিয়ে হুজুরদের মতানৈককের ব্যাপারটি  আলোচনা করবো। তাশাহুদ পড়ার কি কি নিয়ম রয়েছে। কোন নিয়মটির গ্রহণযোগ্যতা বেশি এবং আমাদের কোন নিয়মটি অনুসরণ করতে হবে - এই বষয়গুলোই আমরা আজকের ভিডিও হতে জানতে পারবো।   তবে নিয়মগুলো আলোচনা করার আগে এই ব্যাপারটি আমি আপনাকে বলে রাখি, এই নিয়মগুলো আমি ওয়াজ মাহফিলের বিভিন্ন হুজুরদের বক্তব্য হতে আমি সংগ্রহ করেছি। কোন কোন হুজুরদের বক্তব্য হতে নিয়েছি, তার উল্লেখ আমি করবো না। কারণ তা ওই হুজুরের উপরে বদনাম পর্যায়ে পড়ে যেতে পারে। তবে হুজরদের বক্তব্যের বাইরে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাশাহুদ পড়ার  নিয়মগুলোর যে সকল উৎস রয়েছে, সে উৎসগুলোর লিংক আমি  দিয়ে দেব। প্রয়োজনে দেখে নেবেন।

তাশাহুদের অর্থ কি কি 

প্রথমেই আসি, তাশাহুদ মানে কি এবং আমরা কখন কখন এটি পড়ে থাকি। আরবি التشهد শব্দের অর্থ বাংলায় সাক্ষ্য দেওয়া এবং ইংরেজিতে testify  বা bearing witness আরবি তাশাহুদের বাংলা অর্থ আরো রয়েছে, যেমন শপথ গ্রহণপূর্বক ঘোষণা করা অথবা সত্য বলে ঘোষণা করা। এই তাশাহুদে কি সত্য বলে আমরা ঘোষণা করি? ঘোষণা করি, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই  এবং মোহাম্মদ তার বান্দা রসূল।

কোন মাজহাব কোন তাশাহুদ পড়েন 

এবারে আসুন, নামাজের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ রাকাতের বৈঠকে আরবিতে আমরা  যে তাসাহুদটি পড়ি, তা জেনে নেই। আমাদের হানাফীসহ অন্য আরো কয়েকটি মাজহাবে এই তাসাহুদটি  এভাবে পড়া হয়:

(Sunan Tirmidhi, after Hadith: 289)

অর্থ: সকল মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা রাসুল।

https://shorturl.at/htHOR

এই নিয়মটি আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসুদ হতেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবীজি আমার হাতে হাত রেখে আমাকে যেভাবে তাশাহুদ শিখিয়েছেন সেটিই হলো আত্তাহিয়াতু…., এই তাসাহুদটি আমাদের হানাফী মাজহাব হাম্বলী মাজহাবে পড়া হয়। কোনো মায্হাবেই নামাজে তাশাহুদ পড়া ফরজ নয়। তবে  হানাফী মাজহাবে এই তাসাউহুদটি  পড়া ওয়াজিব।

তাশাহুদের আরো কয়েকটি ভার্সন রয়েছে। যেমন ঈমাম মালিক কর্তৃক নির্দেশিত তাসাহুদটি এরকম,

 


ٱلتَّحِيَّاتُ لِلَّٰهِ ٱلزَّاكِيَاتُ لِلَّٰهِ ٱلطَّيِّبَاتُ وَٱلصَّلَوَاتُ لِلَّٰهِ ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ، ٱلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ ٱللَّٰهُ ٱلصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.

বিশুদ্ধ সালাম ও দোয়া আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরও। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আরো সাক্ষ দিচ্ছি যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।

 

 

ইব্ন আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত ঈমাম শাফির নির্দেশিত তাসাহুদটি হলো,


ٱلتَّحِيَّاتُ ٱلْمُبَارَكَاتُ ٱلصَّلَوَاتُ ٱلطَّيِّبَاتُ لِلَّٰهِ، ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ، ٱلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ ٱللَّٰهُ ٱلصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ ٱللَّٰهِ.

সালাম, আশীর্বাদ ও কল্যাণ আল্লাহর কাছে, হে নবী, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত, শান্তি আমাদের উপর বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরও। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।

 

 

 

 

আবার বারো ইমামে বিশ্বাসী শিয়াদের জাফারি মতবাদে তাসাহুদটি ভিন্ন রকমের,


أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.‌ ٱللَّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন শরীক নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।

 

জায়িদি মতবাদের অনুসারী  শিয়াদের আর একটি সম্প্রদায়, তাসাহুদটি যেভাবে পড়েন, তার অর্থ হলো,  

"শুরু করছি আল্লার নামে, এবং আল্লার উপর নির্ভরশীল হয়ে। প্রশংসা আল্লার জন্য, এবং সুন্দর নামগুলি সবই প্রভুর জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লা ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, এবং তার কোন অংশীদার নেই। সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর বান্দা এবং রাসূল (সাঃ)।(হে আল্লাহ) মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিবার-পরিজনের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইব্রাহীমকে পবিত্র করেছেন যা প্রশংসনীয় গৌরবময় ।"

https://shorturl.at/djrFX

 

তাশাহুদের আরো কিছু কিছু ভার্সন রয়েছে। তবে সবগুলোর উদ্দেশ্য একই - আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ তার বান্দা রাসূল।

 

এতক্ষন আমরা যে তাসাহুদগুলো শুনলাম, সবগুলোর পড়ার উদ্দেশ্য একই রকম। অর্থাৎ সাক্ষ দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ তার বান্দা ও রাসূল। তবে তাশাহুদের কোনো কোনো ভার্সনে একটু বাড়তি অংশ রয়েছে। যেমন, সব মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। …..অর্থাৎ কোনো কোনো তাশাহুদে কিছু কিছু দোআ যোগ করা হয়েছে।

আবার ঈমাম মালিকের বর্ণিত তাশাহুদে আর একটি দোআ যোগ করা হয়েছে, যেমন - বিশুদ্ধ সালাম ও দোয়া আল্লাহর জন্য, হে নবী আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরও।

শিয়াদের জায়িদি সম্প্রদায়ের তাশাহুদে সাক্ষ দেয়ার আগে আল্লাহ পাকের কিছু প্রশংসা করে নেয়া হয়েছে। যেমন "শুরু করছি আল্লার নামে, এবং আল্লার উপর [নির্ভরশীল হয়ে]। প্রশংসা আল্লার জন্য, এবং সুন্দর নামগুলি সবই প্রভুর জন্য। হে আল্লাহ) মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিবার-পরিজনের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইব্রাহীমকে বর্ষণ করেছেন - যা প্রশংসনীয় ও গৌরবময় ।"

মাশাল্লাহ, তাশাহুদের মধ্যে সবগুলো দোয়াই সুন্দর। তবে এই ফাঁকে একটি কথা আমি বলে রাখি, কোনো মাজাবকেই নিন্দা করবেন না। হতে পারে  আমলের দিক হতে ওই মায্হাবটি আমার আপনার মাজহাব হতেও অধিক সঠিক। আল্লাহপাকই সবচাইতে ভালো জানেন।

তবে মন থেকে একটি কথা বলে রাখি, আপনি যদি অন্য একজন মুসলিম ভাইকে কাফের বলেও থাকেন, আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কারণ, আপনি-আমি -আমরা সবাই- মুসলিম। আর মুসলিমরা ভাই ভাই - যেটিকে ইসলামিক ব্রাথারহুড বা ইসলামিক ভ্রাতৃত্ব বলে। সে দিক থেকে আপনিতো আমার ভাই। আপনাকেতো আমি ঘৃণা করতে পারি না। সে যাক, আপনি যদি এখনো এই ভিডিওতে থেকে থাকেন, তাহলে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও আপনার জন্য আমার তরফ হতে অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো।

সে যাক, আমাদের হানাফী মাজহাবের তাশাহুদের যে হাদিসগুলো রয়েছে সেগুলোর উৎস হলো বুখারী ৮৩৫  ৬২৩০, মুসলিম ৪০২, আবূ দাঊদ ৯৬৮, নাসায়ী ১২৯৮, ইবনু মাজাহ ৮৯৯, আহমাদ ৪১০১, মিশকাত ৯০৯। আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্য আপনি এই হাদিসগুলো পড়ে নিতে পারেন।  (https://shorturl.at/DEMPT)

এবারে আসুন, তাশাহ্হুদ পড়ার সময়ে ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো নিয়ে একটু আলোচনা করি। আসুন আরবি, ইংরেজি ও বাংলায় হাতের কোন আঙুলকে কি নামে ডাকা হয় একটু দেখে নেই। কারণ তাশাহুদের সময়ে কোন আঙ্গুলকে কিভাবে রাখতে হবে, তা বুঝতে হলে আঙ্গুলগুলোর সাথে আমাদের পরিচিত হতে হবে। আমরা যেটিকে বুড়ো আঙ্গুল বলি, ইংরেজিতে তাকে থামব ও আরবিতে ইবহাম বলে।  আর তর্জনী আঙ্গুলটির ইংরেজি নাম ইনডেক্স ফিঙ্গার, আরবিতে যা সাববাবাহ্। মদ্ধমা আঙ্গুলটির আরবি নাম উস্তা। অনামিকা আঙুলের আরবি বিনসার। আর কনিষ্ঠা আঙ্গুলটিকে আরবিতে বলা হয় খিনছার্।

File: finger name

 

তাশাহুদ পড়ার সময়ে তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানোর বিধান কি কি 

এবারে আসুন, তাশাহুদ পড়ার সময়ে কোন আঙ্গুল কিভাবে রাখতে হবে বা নাড়াতে হবে, হাদিস ও ইসলামিক পন্ডিতদের মতামতের আলোকে আমরা তা জেনে নেই। সহি মুসলিম হাদিস নম্বর ৫৮০ তে আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর এর বরাত দিয়ে উল্লেখ রয়েছে, নবীজি নামাজের তাশাহুদে বসতেন, অতঃপর ডান হাতের আঙুলগুলোকে গুটিয়ে মুঠি বানাতেন, বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের আঙ্গুল, মানে তর্জনী বা সাববাবাহ্ আঙুলটি কে উঁচিয়ে একটি সূচকের মতো  উঁচিয়ে রাখতেন। এ সময়ে যথারীতি তাঁর বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপরে থাকতো এবং ডান হাতের তালু ডান হাঁটুর উপরে থাকতো। মূলত এই তর্জনী আঙ্গুলটিকে অর্থাৎ অন্য সব আঙুলগুলোকে মুঠি করে একটি আঙুলকে  উপরে তুলে এই বিশ্বাসকে জোরদার করা যে আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়।   

তাশাহুদ পড়ার সময়ে আব্দুল্লাহ ইব্ন উমরের বরাত সংক্রান্ত ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল ওপরের দিকে উঠানোর ব্যাপারটি আরো অনেক হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।  যেমন আল নাসায়ী হাদিস নম্বর ১২৭৩, আহমাদ হাদিস নম্বর ৫৯৬৪। এর মধ্যে ঈমাম আহমদের হাদীসটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তর্জনী আঙুলটি উঠিয়ে ওই আঙুলের দিকে দৃষ্টি রেখে আঙ্গুলটিকে নাড়তে হবে।  একই হাদিসে আব্দল্লাহ ইব্ন উমরের বরাত দিয়ে বলা আছে, নবীজি বলেছেন, তর্জনী আঙুলের নাড়ানো মানে শয়তানকে পেটানো যা শয়তানের কাছে তাকে লোহা দিয়ে পেটানোর চাইতেও কঠিন ব্যাথাময় মনে হবে। তবে কোনো কোনো ইসলামী চিন্তাবিদরা এই ধারণাটিকে খাঁটি  সত্য বলে মনে করেন না। তারা তর্জনী আঙ্গুল নাড়িয়ে  শয়তানকে পেটানোর হাদীসটিকে হাসান হাদিস শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। হাসান হাদিস হলো ওই হাদিসগুলো - যেগুলো সহি হাদিসের সমকক্ষ না হলেও অনুসরণ যোগ্য।

তাশাহুদ পড়ার সময়ে তর্জনী আঙ্গুল উঠাতে হবে, এই ব্যাপারটি সবাই মেনে নিলেও আঙুলটি কখন কখন নাড়াতে হবে, তা নিয়ে কোনো হাদিসেই  স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন হাদিস বিশারদগণ এই সময়টিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের পেশকৃত বয়ানে তারা তাদের সপক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, তাশাহুদ পড়ার  পুরো  সময়েই আঙ্গুলটিকে উঁচিয়ে রাখতে হবে বা উঁচিয়ে রেখে নাড়াতে হবে।  আবার কেউ কেউ বলছেন তাশাহুদের মধ্যে যখন  দোয়ার অংশটি আসবে, যেমন আস্সালামুয়ালিকা আইয়ু হান  নাবিয়্য র সময়ে উঁচানো আঙ্গুলটিকে ওপরে নিচে নাড়াতে হবে। কারুর কারুর মতে, এই তাশাহুদ পড়ার সময়ে তর্জনী আঙ্গুলটিকে ওপরে নিচে নয়, চক্রাকারে নাড়াতে হবে।

এমনকি কারুর কারুর মতে শুধু তাশাহুদ পড়ার সময়ে নয়, তাশাহুদের পরে আমরা যে দরূদ পড়ি, ওই দরূদের যে অংশে দোয়ার অংশ আসে, সে সময়েও এগুলি উঁচিয়ে নাড়াতে হবে। তবে হানাফী মাজহাবে আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর লা র অংশে আঙ্গুল উঠিয়ে আবার তা নামিয়ে নিতে হবে এবং তর্জনী আঙ্গুল উঠানোর সময়ে অন্য আঙ্গুলগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ থাকবে। লা ইলাহার অর্থ হলো আল্লাহ নাই - যেটি শেরেকি হয়ে যায়। এ কারণে ঠিক লা ইলাহা বলার সময়টাতে একটি আঙ্গুল উঠিয়ে এটি প্রকাশ করা যে - একজন ব্যাতিত - যিনি আল্লাহ।  আবার কারুর কারুর মতে তর্জনী আঙ্গুল উঠানোর সময়ে অন্য সবগুলো আঙ্গুল মুষ্ঠিবদ্ধ না করে বৃদ্ধাঙ্গুল ও মদ্ধমা আঙুলের মাথাকে একসাথে মিশিয়ে আরবি অঙ্ক পাঁচের মতো আকার দিতে হবে এবং তর্জনীকে উঁচিয়ে কিবলার দিকে নির্দেশ করতে হবে। 

File: tashahud finger shape

তাশাহুদ পড়া কি ফরজ না ওয়াজিব 

তাশাহুদ পড়ার সময়ে আঙ্গুল নাড়ানোর ব্যাপারটিকে কোনো মায্হাবেই ফরজ বা ওয়াজিব বলা হয় নাই, সুন্নত বলা হয়েছে। অতএব, আপনি যদি এটির আমল করতে চান, তাহলে যে নিয়মটি আপনার কাছে সঙ্গত বা ভালো মনে হবে, সেটিই আপনি অনুসরণ করবেন। হুজুররা বলেন, এমনকি আপনি যদি তাশাহুদ পড়ার সময়ে আঙ্গুল নাও নাড়ান, তাতেও নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না, না পড়লে আপনি হয়তো  কিছু সাওয়াব পাওয়া হতে বঞ্চিত হবেন।

অতএব, নামাজে র বৈঠকে কোন তাসাহুদটি  পড়বেন, এবং তাশাহুদ পড়ার সময়ে আঙ্গুল নাড়ানোর কোন নিয়ম টি আপনি অনুসরণ করবেন, এটি আপনিই স্থির করবেন। যদি কোনো বিশেষ হুজুরের প্রতি আপনার পূর্ণ আস্থা থাকে, তার নির্দেশ মতেই আপনি তাশাহুদ পড়বেন, বা তাশাহুদে আঙ্গুল নাড়ানোর আমলটি করবেন।

তাহলে তাশাহুদ পড়া র নিয়ম নিয়ে আর কোনো বিতর্ক নয়। কারণ বিতর্ক বিভেদের সৃষ্টি করে। আর বিভেদ বিভক্ততার জন্ম দেয়। ইসলামে এ রকম খন্ড খন্ড বিভক্তিগুলোই মুসলিম ঐক্যের ছোট ছোট ফাটলের সৃষ্টি করে - যা সম্মিলিতভাবে মুসলিম ঐক্কে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মুসলিম ঐক্যের অভাব যখন দেখা দেয়, তখন ইহুদি খ্রিস্টান বা অন্য ধর্মের কুচক্রীরা সুযোগ বুঝে মুসলিমদের ক্ষতি করে।

তাই হুজুরদের কাছে অনুরোধ, কোনো কোনো আমলের ব্যাপারে আপনাদের মধ্যে মতভেদ থাকতেই পারে, বরং থাকাটাই স্বাভাবিক। আপনারা যার যার মতামত দিন। কিন্তু অন্য আলেম বা আলেমদের মতামতকে - সত্য নয় বা ভুল - এভাবে না বলে - আপনার কাছে কোনটি সঠিক বা কোনটি অধিক সঠিক - তাই বলুন।

আমরা সাধারণভাবে যা বুঝি, ইসলাম ধর্মের রীতি নীতি পালন কঠিন কোনো কর্ম নয়। সহজ সরল পথ অবলম্বন করতেই আল্লাহ্পাক আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইহ দিনাস সিরাতল মুস্তাকীম, - এ রকম ভাবেই আল্লাহ্পাকের কাছে চাইতে আল্লাহ্পাক আমাদেরকে বলেছেন। তাই আপনাদের, মানে হুজুরদের কাছে আমাদের অনুরোধ, ইসলাম ধর্মের আমলগুলোকে সহজভাবে উপস্থাপিত করুন - যাতে আমাদের মত সাধারণ মুসল্লিদের সেগুলো পালন করা সহজ হয়। দুনিয়ার সকল আলেম সমাজ এক হউন , আর দুনিয়ার সকল মুসলিদেরকে একটি মাত্র ছাতার নিচে নিয়ে আসুন। আর সে ছাতাটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু - মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। 

আজ তাহলে এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন।  

আস্সালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।


তাশাহুদ নিয়ে তৈরী ভিডিও দেখতে নিচের ছবিটিতে ক্লিক করুন 

Video link



No comments

Powered by Blogger.